প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : ভুয়ো পুলিশ পরিচয় দিয়ে পুলিশেই চাকরী দেবার নাম করে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ । আর্থিক প্রতারণা কাণ্ডে গ্রেফতার হল আরও এক প্রতারক।পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ওই প্রতারকের নাম আকাশ কুমার সাউ । কলকাতার চিৎপুরের ঘোষবাগান এলাকায় তার বাড়ি ।প্রতারণা কাণ্ডের অন্যতম পাণ্ডা রাজেন হাজরাকে হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে এই চক্রের অন্যতম কাণ্ডারী কলকাতার আকাশ সাউ। তারই মধ্যে প্রতারকদের দ্বারা লক্ষ লক্ষ টাকা আর্থিক প্রতারণার শিকার ১৩ জন বেকার যুবক পুলিশের দ্বারস্থ হয় ।এরপরেই রায়না থানার পুলিশ আকাশকে গ্রেফতারের তৎপরতা শুরু করে দেয় ।অভিযান চালিয়ে রহরা থানা এলাকা থেকে পুলিশ আকাশ সাউ কে গ্রেফতার করে । রাজেন ও আকাশকে এক সাথে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ নিশ্চিৎ হয় এই প্রতারণা কাণ্ডের জাল বহুদূর বিস্তৃত রয়েছে । এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার আরও অনেকে যে জড়িত রয়েছে তাও জানতে পারে পুলিশ । প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত বাকিদের নাগাল পেতে তদন্তকারী অফিসার শুক্রবার রাজেন ও আকাশকে বর্ধমান আদালতে পেশকরে ১১ দিন নিজেদের হেপাজতে নিতে চেয়ে আবেদন জানান।সিজেএন রতন কুমার গুপ্তা দু’জনকেই ৭দিন পুলিশ হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন । জানা গেছে , তিন প্রতারিত যুবক পুলিশের কাছে এই প্রতারকদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গোপন জবানবন্দী দিতে চান । সেই মত পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৪ শে জুলাই জবানবন্দী গ্ৰহণ করা হবে ।
রায়না থানার ভগবতীপুরের যুবক বাপ্পাদিত্য পোড়েল কয়েকদিন আগে প্রতারকদের বিষয়ে রায়না থানায় অভিযোগ জানানোর পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ ।অভিযান চালিয়ে গত সোমবার পুলিশ প্রারণা কাণ্ডের পাণ্ডা রাজেন হাজর সহ তাঁর তিন সাগরেদ নাজেম মল্লিক , সত্যজিৎ বিট্টার ও শেখ জানারুল ওরফে পিন্টু কে গ্রেফতার করে ।ধৃতদের মধ্যে রাজেন ও সত্যজিৎতের বাড়ি বর্ধমান থানার কান্টিয়া এলাকায় । জামালপুর থানার জানকুলি গ্রামে বাড়ি নাজেমের । জানারুলের বাড়ি বর্ধমান শহরের বাথানপুরে । ধৃতদের গত মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে পুলিশ রাজেনকে নিজেদের হেপাজতে নেয় । এরপর রাজেনকে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েই পুলিশ জানতে পারে প্রতারণা চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য । পুলিশ জানতে পেরেছে সিআইডি অফিসার পরিচয় দিয়ে বর্ধমান থানার নান্দুরে ঘরভাড়া নিয়েছিল প্রতারণা চক্রের পাণ্ডা রাজেন ।সেখানে বসেই রাজেন তাঁর সাগরেদদের নিয়ে পুলিশে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারক চক্র চালাতো । চাকরি প্রার্থীদের ওই অফিসে নিয়ে এসে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হত। এমনকি প্রাতারকরা চাকরি প্রার্থীদের ব্যারাকপুরে পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটেও নিয়ে যেত । তবে প্রতারকরা চাকরি প্রার্থীদের ইনস্টিটিউটের বাইরে থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে বোকা বানাতো । রাজেনকে হেপাজতে নিয়ে তদন্ত চালিয়ে নান্দুরের ভাড়াবাড়িতে হানা দেয় পুলিশ । সেখান থেকে পুলিশের কয়েকটি খাঁকি পোশাক ছাড়াও পুলিশের বেল্ট, টুপি, জুতো, রাজ্য পুলিসের লোগো, আই কার্ড ও লাল বাজারের নকল গেট পাস উদ্ধার হয়েছে। যে গুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে । জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে ,চাকরি প্রার্থীদের বোকা বানাতে আশোক সাউ তাদের ব্যারাকপুর ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে নিয়ে যেত । পুলিশ জানিয়েছে ,এ পর্যন্ত ১৩ জন প্রতারিতের হদিশ মিলেছে । প্রতারকরা তাদের কাছ থেকে ৩৫ লক্ষের বেশী টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণা চক্রের দুই পাণ্ডাকে হেপাজতে নিয়ে পুলিশ চক্রের বাকি সদস্যদের ধরার তৎপরতা এদিন থেকেই শুরু করে দিয়েছে ।
ছবি : বাচ্চু সামন্ত